বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানী ঢাকার রায়েরবাগ এলাকার আনোয়ারুল খান ববি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হয়েও সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। কখনো আওয়ামীলীগ, কখনো বিএনপি আবার কখনো জামাতের পরিচয় দিয়ে নিজেকে ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা দাবি করে প্রতারণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তিনি। তার প্রতারনায় নি:স্ব হয়েছেন অনেকেই।
খোজখঁবর নিয়ে জানাগেছে, রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল খান ববি অগ্রনী ব্যাংকের সামান্য একজন সিকিউরিটিগার্ড হয়ে টাকা পাহাড় গড়েছেন। সরকারি জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করে বছরের পর বছর ভাড়া তুলে খাচ্ছেন। সৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে বেশ দাপুটেই এলাকায় চলছেন। অথচ রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থেকে যাত্রাবাড়ি এলাকায় ছাত্র জনতা অভূত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার একজন আনোয়ারুল খান ববি। তার নেতৃত্বে অসংখ্য ছাত্র হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র জনতার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আনোয়ারুল খান ববি।
রায়েরবাগ এলাকায় তিন বহুতল ভবন রয়েছে আনোয়ারুল খান ববি। এছাড়াও পুনম সিনেমা হল সংলগ্ন প্রায় ত্রিশটি অটোরিক্সার সমন্বয়ে একটি গ্যারেজ। এছাড়াও সরকারি জমিতে প্রায় চারটি দোকান রয়েছে তার।
আনোয়ারুল খান বরির প্রতারণায় নি:স্ব হয়ে যাওয়া এক ভুক্তভোগী আমেনা বেগম এই প্রতিবেদককে জানান, ২০১৩ সালে অগ্রনী ব্যাংকে একাউন্ট করতে গিয়ে দেখা হয় আনোয়ারুল খান ববির সাথে। তারপর ধীরে ধীরে বরি আমেনার মন জয়ে কাজ করেন। এক পর্যায়ে তাদের দুজের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠলে আনোয়ারুল খান ববি আমেনার সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরেন। তারপর বিভিন্নভাবে তাকে ব্ল্যাক মেইলিং করতে থাকেন। আমেনা বেগমের স্বামীর ব্যাংক থেকে লোন উঠানো টাকার উপর নজর পরে প্রতারক আনোয়ারুল খান ববির। ছলেবলে কৌশলে রিক্সা গ্যারেজ ও রিক্সা কিনে ব্যবসা করার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রায় আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেন আনোয়ারুল খান ববি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময়ে আমেনাকে নিয়ে অনেকটা তার মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে ভোগ করেছেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে আমেনা বেগমের স্বামী দেশে আসার পর তাদের আনোয়ারুল খান ববি ও তার মধ্যে সম্পর্কের ভাটা পরে। বন্ধ করে দেন আনোয়ারুলের সাথে যোগাযোগ। আনোয়ারুল স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে চলা ফেরা করায় নেতাদের দাপট দেখিয়ে আমেনা বেগমের বাড়ি ঘর ভাংচুর করেন এবং তার সাথে দেখা না করলে আগের মতো চলাফেরা না করলে আমেনা বেগমকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয়। গেল পাঁচ আগষ্ট ছাত্র জনতার অভূত্থানে সৈরাচার হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আনোয়ারুল খান ববি আমেনা বেগমের বাসায় এসে তার বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। ববির স্ত্রী এসে আমেনা বেগমকে মারধর করেছে। আমার গলায় একভরি ওজনের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের দরজা ভেঙ্গে গেছে। ওই সময় ববির স্ত্রী, ভাগিনা সুমনসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে আমার উপর হামলা করেছে। শুধু তাই নয় ববির গ্যারেজে টাকা চাইতে গেলে ববির সমন্ধী দুলাল, জব্বর ও তার স্ত্রী হাসনা হেনাসহ সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর করে একটি খালি স্ট্যাম্পে সাইন করে রেখে।
ভুক্তভোগী আমেনা বেগম আরো জানান, ২০১৩ সালে অগ্রনী ব্যাংকের জিরো পয়েণ্ট শাখায় একটি একাউন্ট করতে গিয়ে তার সাথে পরিচয় হয়। তারপর থেকেই আনোয়ারুল খান ববির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে আমেনা বেগমের আনোয়ারুল খান বরির ছোট ভাই নেভী খানকে তিন লাখ টাকা ধার দেন। পরে সাড়ে তিন লাখ টাকা আনোয়ারুল খান ববিকে দেন। তারপর আনোয়ারুল খান ববির আরেক আত্মীয়কে এক লাখ টাকা দেন। টাকা চাইলে আনোয়ারুল খান ববি টাকা দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। উল্টো তাকে তার সাথে আগের মতো অণৈতিক কাজ করতে বলে। তবে আমেনা বেগম আর ভুল করতে চায়না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, আনোয়ারুল খান ববি একজন আওয়ামীলীগের দোষর ছিলেন। রায়েরবাগ এলাকায় আওয়ামীলীগের কর্মীদের সাথে উঠাবাস করতো। ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে বিএনপির কর্মীদের সাথে চলাফেরা করছে আনোয়ারুল খান ববি। আমেনা বেগমের সাথেও সখ্যতা গড়ার চেষ্টা আগের মতোই করছে। তবে টাকা ফেরত চাইলেই নানান তালবাহানা করতে থাকে নারী লিপ্সু আনোয়ারুল খান ববি।
আমেনা বেগমের খালাতো বোন জেসমিন আক্তার নামে জানান, আমার বোনকে সহজসরল পেলে আনোয়ারুল খান ববি তার সাথে প্রতারণা করেছে। তাকে ফুসলিয়ে টাকা নিয়েছে। তার পাওনা টাকা দিতে তালবাহানা করছেন বহুদিন। কিছু বললেই এলাকার আওয়ামীলীগের লোকদেন দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এখন আবার বিএনপির নেতাদের সাথে চলাফেরা করছে। আমরা এই প্রতারকের কাছ থেকে মুক্তি চাই। তার শাস্তি চাই সরকারের কাছে।
আমেনা বেগমের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শারমীন বেগম জানান, একজন সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়ে আনোয়ারুল খান ববি আমেনা বেগমের সাথে যে ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটিয়েছে তার নিন্দা জানাই। এই প্রতারকের কোন মাপ নেই। তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। আমাদের টাকা ফিরিয়ে না দিলে আমরা তার বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ নিয়ে আদালতের কাঠ গড়ায় তাকে দাড় করাবো এবং আইনের আওতায় তাকে আনবোই ইনশাল্লাহ।
আবুল কালাম নামে রায়েরবাগ এলাকার এক বাসিন্দা জানান, গণঅভূত্থানে ছাত্র জনতাকে পুলিশী হামলা যারা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন আনোয়ারুল খান ববি। তার কারণেই অনেক ছাত্ররা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অনেকেই গুলি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনো হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারুল খান ববির সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।
ঢাকা দক্ষিন বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন জানান, আমাদের দলে কোন সৈরাচারের দোসরদের ঠাই নেই। যারা গত সতের বছর সৈরাচারের সাথে থেকে এলাকায় লুটপাট, চাঁদাবাজি, সাধারণ মানুষের উপর জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন করেছেন তাদের কোনভাবেই পশ্রয় দেওয়া হবে না। আমাদের দলের কোন কর্মীও যদি ওদের সহযোগী করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ওয়ারী জোনের ডিসি জিয়াউল হাসান তালুকদার জানান,যারা মানুষকে প্রতারণা ফাঁদে ফেলে স্বর্বস্বলুটে নেয়। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, অপরাধী যতই শক্তিশালী হউক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আনোয়ারুল খান ববির বিরুদ্ধে নারীর সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও নারীদের সাথে অসামাজিক কার্যকালাপ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


