কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ করা ১০১ ইয়াবা কারবারিকে মাদক মামলায় দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর অস্ত্র আইনে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওআ হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় দেন।
রায় ঘোষণার আগে হাজতে থাকা ১৭ আসামিকে দুপুর ১১টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছেন। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে বিচারক অস্ত্র ও ইয়াবা মামলার রায় পড়া শুরু করেন। দুপুর দেড়টার দিকে রায় পড়া শেষ হয়। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, চার্জশিটভুক্ত মোট ৩০ সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২১ জন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্কে ইয়াবা মামলায় আসামিদের দেড় বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে অস্ত্র আইনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের খালাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যেহেতু আসামিরা আত্মসমর্পণের পর দুই বছর কারাভোগ করেছেন, সেহেতু হাজতে থাকা আসামিরা জরিমানা দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। আর যারা পলাতক তাদের অবশ্যই আদালতে হাজির হয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফা, আবুল কালাম আজাদ এবং আবু সিদ্দিক ওসমানী। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামিরা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং ইয়াবা ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল। এ অবস্থায় তাদের মামলার দায় থেকে খালাস দিলে সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই খালাস দেওয়া সমীচীন হবে না।
সাক্ষীদের সাক্ষ্য তুলে ধরে আদালত বলেন, পুলিশ ছাড়া নিরপেক্ষ সাক্ষীরা ঘটনা এবং অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার দেখে নাই বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান দেখেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনের কয়েকদিন আগে থেকে তাদের জেলা পুলিশ লাইন্সে জড়ো করা হয়েছিল। সেখান থেকে তাদের গাড়ি বহরে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আনা হয়। আদালত বলেন, আসামিরা তাদের অপরাধ বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছিল এবং পরিকল্পনা মোতাবেক তারা পুলিশের নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশে তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম বাদী হয়ে মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ২টি মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে পরিদর্শক এবিএমএস দোহাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছর ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক তামান্না ফারাহর আদালতে ১০১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। তবে আত্মসমর্পণের বিষয়কে এজাহারে পুলিশের অভিযান এবং ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার বলে মামলা সাজানো হয়।