শুক্রবার ,   ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ,   ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,  ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
Cnbnews

ক্রীড়াঙ্গনে সাবিনাদের পূর্ণতার বছর

Print Friendly, PDF & Email

অবিশ্বাস্য বাঁকবদল! এমন দিনের ছবি দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। একসময় পুলিশ প্রহরায় ফুটবল খেলতে হয়েছে মেয়েদের। এমনও হয়েছে, কমলাপুর স্টেডিয়ামের ভেতর মেয়েরা খেলছে, আর বাইরে খেলা বন্ধের দাবিতে মিছিল হয়েছে। সেই মেয়েদেরই এ দেশের মানুষ কাঁধে তুলে নেচেছে, বিদায়ি ২০২২ সালে।

মেয়েদের যুগবদলের গল্পটা পূর্ণতারও। মেয়েদের ফুটবলের বিরুদ্ধে আন্দোলন খুব বেশি পেছনের কথা নয়। ২০০৫-০৬ সালের দিকেই ঘটেছে তা। সে সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের উদ্যোগে মেয়েদের ফুটবল চালুর চেষ্টা করা হচ্ছিল। মহিলা সমিতির জোরালো অবস্থান এবং সরকারকে পাশে নিয়ে সেই বিরোধিতা উতরে যায় বাফুফে। হাঁটি হাঁটি করে পথচলা প্রতিযোগিতামূলক রূপ পায় ২০০৯-১০ সালের দিকে।

ঢাকায় হওয়া দক্ষিণ এশীয় গেমসে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ফুটবল। ভারত, নেপালের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্রোঞ্জ জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। পরের বছর কক্সবাজারে মেয়েদের সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপেরও যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ তৃতীয় হয়েই শেষ করে।

তখন খেলা নিয়ে প্রকাশ্য কোনো বিরোধিতা না থাকলেও পারিবারিক, সামাজিক বাধা ডিঙিয়ে নতুন নতুন মেয়েদের ফুটবলে আনা সহজ ছিল না। কিন্তু শক্তিশালী জাতীয় দলের জন্য তো চাই একটা পাইপলাইন। ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হওয়া বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ সেই পথটাই খুলে দেয়। দেশের আনাচে-কানাচে থেকে স্কুলের মেয়েরা উঠে আসে ফুটবলে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ যখন অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় নেপালে, সেই দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই ছিল সেই বঙ্গমাতা ফুটবল থেকে উঠে আসা।

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সেই তখন থেকে বাংলাদেশের সাফল্য পাওয়া শুরু। তখনকার মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, কৃষ্ণা রানী, সানজিদা, শামসুন্নাহারদের নিয়ে ২০২২ সাফ শিরোপায় পূর্ণতা পায়।

অনূর্ধ্ব-১৪ দল নেপালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, পরের বছর কিরগিজস্তানেও। সেই মেয়েরা পরে অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে ঢাকা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে শিরোপা জেতে। বাছাইয়ের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এশিয়ান পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মূল আসর।

এর মধ্যে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের শিরোপা জেতে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের মেয়েরা। পরের বছর অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের শিরোপা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের এই সাফল্যেই সিনিয়র পর্যায়ে কবে অনূদিত হবে, সেই অপেক্ষা ছিল। কারণ সেই ২০১০ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত সিনিয়র পর্যায়ে পাঁচটি সাফ হয়ে গেলেও বাংলাদেশ শিরোপার মুখ দেখেনি। একবার কেবল রানার্স-আপ, তৃতীয় হয়েছিল তিনবার। তাই আশা করা হচ্ছিল জুনিয়রে সাফল্য পাওয়া মারিয়া-সানজিদারা যখন বড়দের সঙ্গেও পাল্লা দিয়ে লড়বে, তখনই বদলাবে এই ছবিটা।

টিম ম্যানেজমেন্টও টার্গেট করেছিল ২০২৪ সালকে। কিন্তু সানজিদারা ততটা অপেক্ষায়ও রাখেননি। যে ভারত ও নেপালকে সিনিয়র পর্যায়ে এক যুগেও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ, তাদেরই কাঠমাণ্ডুতে একে একে হারিয়ে সাফল্যের গল্প লেখা সাবিনাদের। ২০১০ সাফে খেলা একমাত্র সাবিনা খাতুনই ছিলেন এই দলে।

পূর্ণতার গল্পটা তাঁরই জানা সবচেয়ে বেশি, ‘সুসময় যে আসবেই, আমরা জানতাম। আগের সাফেও সবাই বলেছে, আমাদের খেলোয়াড়দের বয়স কম বলেই আমরা পারিনি। শেষ দুই বছরে এই খেলোয়াড়রা যেমন অভিজ্ঞ হয়েছে, তেমনি শারীরিকভাবেও তৈরি হয়ে গেছে সিনিয়র পর্যায়ে লড়াইয়ের জন্য।

তার পরও এই সাফেই সবাই আমরা এতটা ভালো খেলব অনেকেই ভাবতে পারিনি। আমাদের মেয়েদের ফুটবল যে কত দ্রুত উন্নতি করেছে, এটাই তার প্রমাণ। ’

মালদ্বীপকে প্রথম ম্যাচে ৩ গোল, পরের ম্যাচে ৬ গোল পাকিস্তানের জালে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে প্রথমবার ভারতকে হারানো, তা-ও ৩-০ গোলের দাপটে। সেমিফাইনালে ভুটান দাঁড়াতেই পারেনি, ৮ গোলে উড়ে গেছে। সবশেষে কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালিদের তুমুল সমর্থনের বিরুদ্ধে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে সাবিনাদের শিরোপা জয়ই বলছে কতটা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ এ আসরে।

তাতে ভেসে গেছে প্রায় দেড় যুগ আগের তীব্র বিরোধিতা, সাবিনাদের নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেছে বাংলাদেশ। ছাদ খোলা বাসে চ্যাম্পিয়নদের বরণ বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে। ১৯৯৯ আইসিসি ট্রফি জয়ের পর খেলা নিয়ে এতটা উচ্ছ্বাস এ দেশে ফিরিয়েছেন সাফজয়ী মেয়েরা।

সিএনবি/সিএসএস

Related posts

চুনারুঘাটে টমটম চালককে গলাকেটে হত্যা, ১২ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উৎঘাটন

Bablu Hasan

ওরা লাশ চাইছে: শামীম ওসমান

Bablu Hasan

নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় মুখরিত, সোনারগাঁ মাদক মুক্ত সোনারগাঁ গড়ার প্রত্যাশা এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খাঁনের

Bablu Hasan